মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১২

বাংলাদেশে ক্রিকেটের ইতিহাস

ক্রিকেটের আগমন

বাংলাদেশে ক্রিকেটের আগমন ইংরেজদের মাধ্যমে। অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ব্রিটিশরা এ এলাকায় ক্রিকেটের সূচনা করে। ব্রিটিশ আমলে বাংলার ক্রিকেট ছিল প্রধানত পশ্চিমবঙ্গকেন্দ্রিক। উইজডেনের ভাষ্যমতে কলকাতা ক্রিকেট ক্লাব গঠিত হয় ১৭৯২ সালে। ১৯২৬ সালে এম.সি.সি. কলকাতার ইডেন গার্ডেনে অবিভক্ত ভারতের সঙ্গে খেলে। ১৯৩৫ সালে বাংলা রঞ্জি ট্রফিতে প্রথমবারের মতো অংশ নেয়।

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর এই ভূখন্ড পরিচিত হয় পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানীয় দল কায়েদে আজম ট্রফিতে অংশ নেয়া শুরু করে ১৯৫৪ সাল থেকে। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে নবনির্মিত ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) প্রথম টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানভারতের মধ্যে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৯ সালের মাঝে এই স্টেডিয়ামে মোট ৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়। তবে পূর্ব পাকিস্তানের কোন খেলোয়াড়ের পাকিস্তানের মূল একাদশে খেলার সুযোগ হয়নি।তবে ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের রকিবুল হাসান সুযোগ পান।

১৯৭২ থেকে ১৯৯৬

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হয়। ঢাকাচট্টগ্রামে ক্রিকেট লীগ শুরু হয়। ১৯৭৪/৭৫ মৌসুমে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু হয়, জেলা পর্যায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগ আরম্ভ হয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রতিযোগিতা, যেমনঃ শহীদ স্মৃতি ক্রিকেট, দামাল সামার ক্রিকেট, স্টার সামার ক্রিকেট, জাতীয় যুব ক্রিকেট, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা প্রভৃতি শুরু হয়। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এম.সি.সি. প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে খেলতে আসে। ২৬ জুলাই, ১৯৭৭ বাংলাদেশ আই সি সি-র সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে। ৭০ দশকের শেষ দিক হতে বাংলাদেশে শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন দল ট্যুরে আসতে শুরু করে। এম.সি.সি. বেশ কয়েকবার এদেশে আসে। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আই সি সি ট্রফিতে বাংলাদেশ অংশ নেয়। ১৯৮২ সালে অংশ নেয় দ্বিতীয় আই সি সি ট্রফিতে। এতে তারা চতুর্থ স্থান লাভ করে। ১৯৮৬ সালের মার্চে শ্রীলংকায় আয়োজিত দ্বিতীয় এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ তাদের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে। একই বছর তৃতীয় আই সি সি ট্রফিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ১৯৮৮ তৃতীয় এশিয়া কাপ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়।এই এশিয়া কাপ এ ভেন্যু ছিল ঢাকা এবং চট্টগ্রাম। ১৯৯০ সালে শারজাহতে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলেশিয়া কাপে বাংলাদেশ অংশ নেয়। ঐ বছরই তারা খেলে চতুর্থ আই সি সি ট্রফি। এতে তারা তৃতীয় স্থান লাভ করে। এসময় আই সি সি ট্রফির শীর্ষ দল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত। '৯০ এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ চতুর্থ এশিয়া কাপে অংশ নেয়। ১৯৯৪ সালে পঞ্চম আই সি সি ট্রফি হয় কেনিয়াতে। এসময় থেকে নিয়ম করা হয় এই প্রতিযোগিতার সেরা ৩টি দল পরবর্তী বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। কেনিয়ার নাইরোবি জিমখানা মাঠে অনুষ্ঠিত খেলায় বাংলাদেশ স্বাগতিক দলের কাছে হেরে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়।

১৯৯৭ থেকে বর্তমান

১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ আই সি সি ট্রফি। পুরো প্রতিযোগিতা কৃত্রিম টার্ফ বসানো পীচে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে তৎকালীন অধিনায়ক আকরাম খানের অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় হল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ( সেরা ৩টি দল এই সুযোগ পায় )। বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনালে কেনিয়াকে ১ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। একই বছরে বাংলাদেশকে আই সি সি ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত একটি ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতায় কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের প্রথম জয় লাভ করে। ঐ বছরের অক্টোবর মাসে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশকে নিয়ে বাংলাদেশে আয়োজিত হয় নকআউট ধাঁচের মিনি বিশ্বকাপ। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে আয়োজিত হয় ৭ম বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এতে বাংলাদেশে ২৪ মে স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে এবং ৩১ মে ৩১ মে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে ৬২ রানে পরাজিত করে। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে এদেশে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় ক্রিকেট লীগ শুরু হয়, যাতে অংশ নেয় সকল বিভাগীয় দল। ২৬ জুন, ২০০০-এ বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে। সেই বছরের ১০ থেকে ১৪ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ তাদের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলে ভারতের বিপক্ষে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন